অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : অবরুদ্ধ গাজায় বেসামরিক অবস্থানে ইসরাইলের নির্বিচার বোমা বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। দখলদার ইসরাইলি সেনারা কেবল বিগত দুই দিনে গাজা উপত্যকার ৮০০ নারী ও শিশুকে হত্যা করেছে।
ইসরাইলের কষাই ও শিশু-ঘাতক প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানে যে যুদ্ধ-বিরতি অব্যাহত রাখলে তার পদত্যাগ ও রাজনৈতিক পতন ত্বরান্বিত হবে তাই হামাসকে উৎখাতের অজুহাতে সে যুদ্ধ অব্যাহত রেখে আপাতত আরও কিছুকাল ক্ষমতা ধরে রাখার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু স্থল যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে গিয়েও ইসরাইলি সেনারা যেভাবে হামাসের হাতে ব্যাপক হারে প্রাণ হারাচ্ছে তাতে ইসরাইল আবারও যুদ্ধ-বিরতির আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে বলে অনেকে সামরিক বিশ্লেষক মনে করছেন।
ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার প্রধান মদদদাতা মার্কিন সরকার এই আশঙ্কাও করছে যে গত ৭ অক্টোবর হামাস যে নজিরবিহীন হামলা চালিয়েছে ভবিষ্যতে ইসরাইলে তার চেয়েও বড় ধরনের হামলা ঘটতে পারে প্রতিরোধ-শক্তিগুলোর পক্ষ থেকে।
ফিলিস্তিনিদের পক্ষে লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি সরকার ছাড়াও ইরাকের কোনো কোনো প্রতিরোধ গোষ্ঠী ইসরাইল ও মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি সিরিয়া থেকেও মাঝে মধ্যে হামলা চালানো হচ্ছে ইসরাইলের ওপর। এসব হামলায় ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে।
এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগ্রাসী মার্কিন-ইহুদিবাদী চক্রকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “আমরা একদিন আগে প্রতিরোধ নেতাদের কাছ থেকে এই বার্তা পেয়েছি যে, গাজায় গণহত্যা অব্যাহত থাকলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে এবং এ অঞ্চল একটি অনুমেয় নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করবে। কাজেই আমরা যথেষ্ট দেরি হয়ে যাওয়ার আগে গণহত্যা বন্ধ করার জন্য সকল যুদ্ধবাজের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”
আমির-আব্দুল্লাহিয়ান বলেন, আল-আকসা তুফান অভিযানে প্রতিরোধ আন্দোলনগুলো এমন কিছু দলিল জব্দ করেছে যাতে দেখা যাচ্ছে, ইসরাইল সরকার পুরো গাজাবাসীকে মিশরে এবং পশ্চিম তীরের সকল ফিলিস্তিনিকে জর্দানে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। মিশর সরকার তেল আবিবের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গাজার প্রতিরোধ যুদ্ধ গোটা আরব বিশ্বকে জাগিয়ে তুলতে পারে এবং সেখানে আবারও আরব বসন্ত বা ইসলামী জাগরণের জোয়ার দেখা দিতে পারে বলে ব্রিটেনের ইকোনমিস্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। এমনকি হামাসের পতন ঘটলেও আরব বিশ্বে রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় পরিবর্তনের জোয়ার দেখা দিতে পারে এবং এর ফলে হামাসের মতই আরও নতুন নতুন ইসলামী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে এই ব্রিটিশ ম্যাগাজিন। ৪০ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত গোটা আরব বিশ্বে ইসলামী বিপ্লবের পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে বলে এই ব্রিটিশ মিডিয়া উল্লেখ করেছে।
সম্ভবত একই প্রেক্ষাপট বা কারণগুলোর ভিত্তিতে সম্প্রতি ১০০ বছর বয়সে পরলোকগমনকারী সাবেক চতুর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও তার মৃত্যুর অল্প কয়েক সপ্তাহ আগে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন যে ইসরাইল আদৌ তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা। সিএনএন-এর সাংবাদিক ফরিদ জাকারিয়া কিসিঞ্জারের ওই উদ্বেগের কথা তুলে ধরতে গিয়ে এটাও বলেছেন যে কিসিঞ্জার আরও যেসব বিষয়ে উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছিলেন সেসবের মধ্যে রয়েছে জাপানের পরমাণু বোমার অধিকারী হওয়া, ইউরোপীয় শক্তিগুলোর পতন এবং কট্টর ইসলামী শক্তিগুলোর বিজয়। উল্লেখ্য, কিসিঞ্জার ছিলেন ইউরোপ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আসা একজন ইহুদি অভিবাসী। বলা হয় তার পরিবারের ১৩ জন সদস্য জার্মান নাৎসিদের হাতে নিহত হয়েছিল।
Leave a Reply